Authors
Claim: ভারতে নির্বাচনী বন্ড কিনেছে পাকিস্তানের হাব পাওয়ার কোম্পানি।
Fact: পাকিস্তানের হাব পাওয়ার কোম্পানি এই দাবি পুরোপুরি খারিজ করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরে, ১৪ মার্চ ওয়েবসাইটে নির্বাচনী বন্ড সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই তথ্যে বলা হয়েছে, কোন কোম্পানি বা ব্যক্তি, কোন তারিখে, কত টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। কখন এবং কোন রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী বন্ড আকারে কত টাকার অনুদান পেয়েছে তাও বলা হয়েছে ওই তথ্যে।
এরপর একটি দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করেছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, “হাব পাওয়ার কোম্পানি” নামে একটি পাক কোম্পানি নির্বাচনী বন্ড কিনে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দিয়েছে।
তবে, আমাদের তদন্তে দেখা গিয়েছে যে, ভাইরাল দাবিটি সত্য নয়। যে পাকিস্তানি কোম্পানি HUBCO সম্পর্কে এই দাবি করা হয়েছে, সেই সংস্থা দাবিটি অস্বীকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিবৃতিও জারি করেছে।
নির্বাচন কমিশন দ্বারা আপলোড করা তথ্য অনুসারে, দেশের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ৬০৬০.৫ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে। যেখানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস প্রায় ১৪২১.৮ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে। ওই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ প্রায় ১৬০৯.৫ কোটি টাকা।
একটি তালিকার ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন, “পাকিস্তান এর ‘ হাব পাওয়ার কোম্পানি ‘, একটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী বন্ড এর মাধ্যমে চাঁদা দিয়েছে। কোন দল কে দিতে পারে বলে আপনার মনে হয় ? মনে রাখতে হবে ওই একই সময়ে পুলওয়ামা হামলায় আমাদের ৪০ জনেরও বেশি সাহসী জওয়ান শহীদ হয়েছিলেন। এই কোম্পানি সুরক্ষিত থাকতে কোন দলকে চাঁদা দিতে হবে? #নির্বাচনী_বন্ড_কেলেঙ্কারি দেশের অন্যতম বৃহৎ কেলেঙ্কারি।” (পোস্টের বানান অপরিবর্তিত)
একই ধরনের পোস্ট দেখা যাবে এখানে ও এখানে।
Fact Check/ Verification
ভাইরাল দাবির তদন্ত করতে নেমে নিউজচেকারের তরফে প্রথমেই পাকিস্তানে অবস্থিত হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটের অনুসন্ধান করা হয়। দেখা যায়, পাকিস্তানের কোম্পানিটির পুরো নামটি হল “দ্য হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড” (হাবকো)। যেখানে তালিকায় উপস্থিত কোম্পানির নাম হল “হাব পাওয়ার কোম্পানি”।
এরপর ওয়েবসাইটে উপস্থিত “আমাদের সম্পর্কে” বিভাগটির অনুসন্ধান করে দেখা হয়। দেখা যায় যে, এটি পাকিস্তানের বৃহত্তম স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা। যার বালুচিস্তান, পাঞ্জাব এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) কারখানা রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটি চিনের “চায়না পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং লিমিটেড”-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে হিসাবে কাজ করছে।
এছাড়া HUBCO-এর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে ১৫ মার্চ একটি পোস্ট করা হয়। যেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয় যে, ভারতের নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে “হাব পাওয়ার কোম্পানি”র কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকী, সংবাদমাধ্যমে যে অনুদানের কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গেও HUBCO জড়িত নয়। পাকিস্তানের বাইরে ওই কোম্পানি কোনও আর্থিক লেনদেন বা বিনিয়োগ করে না। যদিও করে তা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের (SBP) অনুমোদনের পরই করা হয়।
এরপর আমরা জানার চেষ্টা করি যে কোনও বিদেশী সংস্থা ভারতে নির্বাচনী বন্ড কিনে কোনও রাজনৈতিক দলকে সরাসরি অনুদান দিতে পারে কিনা। এই সময়ে আমরা ২ জানুয়ারী, ২০১৮ সালে অর্থ মন্ত্রকের জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাই।
ওই প্রেস রিলিজের প্রথম পয়েন্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভারতের একজন নাগরিক বা কোনও সংস্থাই বন্ড কিনতে পারে।
অতএব, আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রমাণগুলো থেকে এটি স্পষ্ট যে, কোনও বিদেশী সংস্থা, যা কোনওভাবেই ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়, সরাসরি নিজের নামে নির্বাচনী বন্ড কিনতে পারে না। ফলে এখন বলাই যায় যে, পাকিস্তানের “দ্য হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড” (হাবকো) ভারতে নির্বাচনী বন্ড কিনেছে এবং একটি রাজনৈতিক দলকে দান করেছে, এই তথ্যটি ভুল।
ভারতীয় হাব পাওয়ার কোম্পানির তদন্তে আমরা এখন পর্যন্ত কী পেয়েছি?
তালিকায় উপস্থিত ভারতীয় ” হাব পাওয়ার কোম্পানি ” তদন্তে নেমে আমরা opencorporates.com-এ ওই কোম্পানির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। এটি এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট কোম্পানিগুলির বিবরণ রয়েছে৷ কিন্তু আমরা ভারতে ওই নাম বা অনুরূপ নামের কোন কোম্পানি খুঁজে পাইনি।
ইন্টারনেটে কিওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় ওয়েবসাইট ইন্ডিয়া মার্ট এবং জাস্ট ডায়ালে “হাব পাওয়ার কোম্পানি” এর প্রোফাইল খুঁজে পাই। উভয় ওয়েবসাইটেই কোম্পানি সম্পর্কে দেওয়া তথ্যে, একই GST নম্বর GSTIN: 07BWNPM0985J1ZX এবং ঠিকানাটি S/f- 2/40, Delhi-110031 লেখা ছিল।
GST-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ওই GST নম্বরটির অনুসন্ধান করা হয় এবং দেখা যায় যে, সংস্থাটি রবি মেহরার মালিকানাধীন। কোম্পানিটির ব্যবসার মূল জায়গাটি হল গীতা কলোনির ২ নম্বর ব্লকের ৪০ নম্বর বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তল এবং সংস্থার GST রেজিস্ট্রেশন ১২ নভেম্বর ২০১৮ সালে করা হয়েছিল। কিন্তু পরে এটি বাতিল করাও হয়।
এরপর গীতা কলোনির ওই ঠিকানায় পৌঁছে যায় News Checker-এর প্রতিনিধি। গীতা কলোনির 2 নম্বর ব্লকে ৪0 নম্বরের দুটি বাড়ি রয়েছে। সাদা রঙের প্রথম বাড়িতে আমরা একজন বয়স্ক মহিলাকে খুঁজে পাই। তাঁকে রবি মেহরা এবং পাওয়ার হাব কোম্পানি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে, তিনি জানান যে, রবি নামের এক ব্যক্তির বাড়িটি অন্য পাশে অবস্থিত।
ফলে আমরা সেই বাড়িতেও পৌঁছে যাই। কিন্তু চারতলা বাড়িটি বন্ধ ছিল। বাড়ির গেটে ২/৪০ লেখা ছিল, যা GST ওয়েবসাইটেও দেওতে পাওয়া গিয়েছে। এরপর আশপাশের সঙ্গে কথা বলে, বাড়ির মালিক ও পাওয়ার হাব কোম্পানির বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হয়। অনেকে জানান যে, ওই বাড়ির মালিকের নাম রবি অরোরা এবং তিনি ব্যবসায়ী নন, একজন সরকারি কর্মচারী। এমনকী, গত ১০ বছরে হাব পাওয়ার কোম্পানি নামে কোনও ব্যবসা ওই বাড়িতে চলেনি।
এরপর বাড়ির মালিক রবি অরোরার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তিনি আমাদের জানান, “আমি এমন কোনও সংস্থা চালাই না এবং ব্যক্তিগতভাবে রবি মেহরাকে চিনি না। আমি একজন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী। পরিবারের সঙ্গে ওই বাড়ি ছেড়ে ২০২২ সালে অন্যত্র চলে এসেছি। তবে মাঝে মধ্যে আমি ওই বাড়িতে যাই।”
তিনি আমাদের আরও জানান যে, “প্রায় এক বা দুই বছর আগে পর্যন্ত, রবি মেহরার নামে সরকারী সংস্থা থেকে আমাদের বাড়ির ঠিকানায় নোটিশ আসত। যখন News Checker-এ প্রতিনিধি তাঁর কাছে ওই নোটিশগুলো দেখতে চান, তখন তিনি জানান, “এটি অনেক পুরনো বিষয, তাই বর্তমানে আমার কাছে নেই”।
তদন্তের ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত আমরা এটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে, রবি অরোরা ওল্ড গীতা কলোনিতে থাকেন। এছাড়াও, আমরা ওই কোম্পানির GST ফাইলিং সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে নতুন কোনও তথ্য পেলে এই প্রতিবেদনটি আপডেট করা হবে।
Conclusion
এখন পর্যন্ত আমাদের তদন্তে পাওয়া প্রমাণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, একটি পাকিস্তানি কোম্পানির সরাসরি ভারতে তার নামে নির্বাচনী বন্ড কেনার দাবিটি ভুয়ো। এছাড়া আমরা এটাও নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, নির্বাচন কমিশনের তালিকায় উপস্থিত হাব পাওয়ার কোম্পানি এবং রবি মেহরা নামের ব্যক্তির হাব পাওয়ার কোম্পানি একই সংস্থা।
Result: False
Sources:
Tweet made by Pakistan business outlet HUBCO on 15th March
Press release by Ministry of Finance