ওয়াকফ আইন-বিরোধী (Waqf Act 2025) আন্দোলনের জেরে গত কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, সুতি, সামশেরগঞ্জ-সহ বেশ কয়েকটি এলাকা (Murshidabad Violence)। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, অপর গোষ্ঠীর মানুষদের ঘর, বাড়ি, দোকানপাটে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং তাঁদের খুনের অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘর্ষের বেশ কিছু ছবি পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিশানা করেছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। ১৩ এপ্রিল, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে সংঘর্ষ এবং অস্থিরতার নয়টি ছবির একটি কোলাজ পোস্ট করেছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মদতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন হিন্দু উৎসবের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তির সৃষ্টি করেছে। ভাইরাল ওই পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “Doesn’t matter the festival — they just need an excuse to burn it all down. মমতা ব্যানার্জী-র দুধেল গাইদের শুধু একটা অজুহাতের প্রয়োজন!”
ওই ধরনের পোস্টের আর্কইভ ভার্সান দেখা যাবে এখানে ও এখানে।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও একই দাবি-সহ কোলাজটি নিজের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন। যদিও পরে সেটি ডিলিট করে দিয়েছিলেন। ভাইরাল পোস্টটির স্ক্রিনশট নীচে দেখা যাবে।

Fact Check/ Verification
প্রথম ছবিটি গণেশ চতুর্থীতে হিংসার বলে দাবি করা হলেও, তদন্তে দেখা গিয়েছে দাবিটি ভুল। ছবিটি আসলে ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে হাওড়া জেলার সাতরাগাছিতে হওয়া একটি সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের। ছবিটি মূলত সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর একজন ফটোগ্রাফার তুলেছিলেন। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড , ফ্রি প্রেস জার্নাল এবং এশিয়ান এইজের মতো অনেক সংবাদমাধ্যমই ওই সময় একই ক্যাপশন-সহ ছবিটি ব্যবহার করেছিল।

দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তর প্রদেশের লখনউতে হাওয়া এনআরসি এবং সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভের। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।

চতুর্থ ছবিটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তর প্রদেশের লখনউতে সিএএ বিক্ষোভের। পশ্চিমবঙ্গে আয়োজিক হোলি উদযাপনের সঙ্গে এটা সম্পর্কিত নয়।

পঞ্চম ছবিটি এরাজ্যে দীপাবলি উদযাপনের সময় তৈরি অস্থিরতার নয়। সেটি আসলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে আয়োজিত একটি বিক্ষোভের।

দুর্গাপুজোর সময় অশান্তির দৃশ্যের দাবিতে ভাইরাল ষষ্ঠ ছবিটিও ভুয়ো। সেটি আসলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে হাওড়ায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে হাওয়া একটি বিক্ষোভের ছবি।

সপ্তম ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পশ্চিমবঙ্গে হনুমান জয়ন্তী উদযাপনের সময় সংঘর্ষের দৃশ্য হিসেবে শেয়ার করা হচ্ছে, কিন্তু আসলে সেটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরে আয়োজিত সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভের।

অষ্টম ছবিটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উত্তর প্রদেশের লখনউতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আয়োজিত একটি বিক্ষোভের, দশেয়ারা সময়ে পশ্চিমবঙ্গে হওয়া অশান্তির কোনও ছবি নয়।

নবম ছবিটি আসলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আসামের ডিব্রুগড়ে হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী একটি প্রতিবাদের।

আমাদের তরফে তৃতীয় ছবিটিরও সত্যতা যাচাই করা হয়েছিল। সেটি ২০২৩ সালে রামনবমী উদযাপনের সময় হাওড়ায় সংঘটিত একটি সংঘর্ষের দৃশ্য। ছবিটি আসল।

তদন্তে দেখা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও ভাইরাল ছবির কোলাজটিকে ভুয়ো বলে দাবি করেছে।
Conclusion
এখন এটা নিশ্চিত যে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবির কোলাজ, যেখানে হিন্দুদের উৎসবের সময় পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের জড়িত থাকার দাবি করা হয়েছে, সেটি বিভ্রান্তিকর।
Result: Misleading
Sources
Post by West Bengal Police, Dated April 13, 2025
ফ্যাক্ট-চেক এবং সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp চ্যানেল ফলো করুন: https://whatsapp.com/channel/0029Va23tYwLtOj7zEWzmC1Z