Fact Check
ভাইরাল ভিডিওতে দৃশ্যমান তিব্বতের রাস্তায় ভয়ঙ্কররূপী মেঘ আসলে বালিরঝড়
দাবি: ফেসবুক থেকে শেয়ার করা একটি ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছে রাস্তার উপর কালো মেঘের মতো জমাট বাধা কিছু পরে আছে। বেশ অনেক খানি রাস্তা এই মেঘের মতো জমাট কুন্ডলীটি গ্রাস করে রেখেছে। এর উল্টো দিকে একটি মালবাহী ট্রাক দেখা যাচ্ছে আর সেখান থেকে কিছু লোক নেমে এই আশ্চর্য কুণ্ডলীর দৃশ্যটি ক্যামেরা বন্দি করতে ব্যস্ত। এই ভিডিওটির সাথে একটি লাইন লেখা আছে – আকাশ থেকে মেঘ ঝরে পড়লো। তিব্বতের রাস্তায় এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

বিশ্লেষণ: পৃথিবীর ছাদ তিব্বতের প্রকৃতি মাটি যেন অন্যান্য জায়গার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যেখানে মরুভূমি বলতে আমরা শুধু মাত্র আগুনের গোলার মতো গরম বালুরাশিকে বুঝি। তিব্বতের মরুভূমির রূপ যেন এই সংজ্ঞা কে মিথ্যে প্রমাণিত করে দেয়। তিব্বতের মরুভূমি শীতল। নীলাভ লেক, বরফে আবৃত পর্বতমালা, একে যেন কোনো স্বর্গের স্থান বানিয়েছে।
তিব্বতের আবহাওয়াও সব কিছুর থেকে আলাদা। শীতকালে ভয়ঙ্কর শীত এবং গরমকালে মনোরম পরিবেশ থাকে তিব্বতে। মাজে সাজে এখানে ধুলোর ঝড় দেখতে পাওয়া যায় যা চোখের নিমিষেই পপ্রাণঘাতী রূপ ধারণ করে নেয়।
ফেসবুকে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেই রকমেই হিন্দি ভাষাতেও এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে পৃথিবীর উপর আক্রোশের শোধ নেওয়ার জন্য এই করাল বিধংসী মেঘ নেমে এসেছে।

কলকাতার অন্যতম টিভি চ্যানেল Kolkata TV -ও এই ভিডিওটির সত্যতা কি তা না জেনেই একে ‘তিব্বতের মাটিতে পরে গেলো মেঘ’ ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করেছে।
কিন্তু এই দাবি গুলি কতটা সত্যি? এই ভিডিওতে যে ‘মেঘ’ দেখা যাচ্ছে তা কি আদৌ মেঘ না অন্য কিছু। ভিডিওটি সম্পর্কে জানার জন্য আমরা সবার প্রথম Yandex টুলের সাহায্য নিই। কিছু ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে এর ছবি গুলি সম্পর্কে আমরা খোঁজ করতে শুরু করি।
২০১৮ সালের এবিপি ‘Viral Sach ‘-এর একটি ভিডিও আমরা পাই। এই একই ভিডিও নিয়ে তারও অনুসন্ধান করেছে।
তাদের ভিডিও অনুসন্ধান মতে, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ, মহেশ পালাবাট এই ঘটনার পেছনের মূল সত্যিটিকে বের করে আনেন। তার মতে মরুভূমির মতো খালি জায়গার মেঘ অনেক সময় নিচের হাওয়াকে শুষে নেয়, আর শোষন করার সময় ধূলি, বালিকণা সব কিছুই তার মধ্যে প্রবেশ করে। শোষনের পর মেঘ যখন ভারী হয়ে যায় তখন এ নিচের দিকে নামতে থাকে, এবং এর গতিবেগ ঘন্টায় ৮০-৯০ মাইল হয়। এই নেমে আসার সময় ধুলো ও বালি মিশে দৈর্ঘ্যে বাড়তে বাড়তে বিশালাকার রূপ ধারণ করে ঘন বালির দেওয়াল তৈরী করে। ঠিক যেমন এই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে।
কিছু কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করার পর এই ধরণের আরো কিছু ভিডিও আমরা পাই যার স্থান হলো চীন, সৌদি আরব, দুবাই আরো অনেক জায়গা।
ভাইরাল ভিডিওটি কোনো মেঘ বা পৃথিবীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি ঘটনা।
আমাদের অনুসদ্ধানের দ্বারা আমরা জানতে পারি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল দাবিটি সম্পূর্ণ ভুল। এটি পুরোপুরি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।
ফলাফল: ভুল প্রসঙ্গ
ব্যবহৃত টুলস:
- Google keyword search
- Media report
(সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান checkthis@newschecker.in অথবা whatsapp করুন- 9999499044 এই নম্বরে। )