গত ৩০শে মার্চ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রামনবমী শোভাযাত্রাকে ঘিরে হাওড়াতে যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি উৎপন্ন হয়েছিল তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিতর্ক, বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে যেখানে রাজ্যের পুলিশের হস্তক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এই ঘটনার পর যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিজেপিকে দায়ী করেছেন, কারণ তাঁর মতে তাদের যে রাস্তায় যাওয়ার কথা ছিল, মিছিল সেই রাস্তায় যায়নি। তেমনি অন্য দিকে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য টুইটারে ৩০শে মার্চের রামনবমী মিছিল সম্পর্কিত একটি চিঠির ছবি পোস্ট করে দাবি করেছেন VHPকে পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল শোভাযাত্রা বের করার।

এই টুইটের পর অনেকেই দাবি করেছে মিথ্যা দাবি করেছেন মালব্য। কারণ তিনি যে কাগজের ছবি টুইট করেছেন তাতে ‘Received’ কথাটির উল্লেখ আছে। রামনবমী মিছিলকে নিয়ে পুলিশের প্রয়োজনীয় অনুমতির কোনো চিহ্ন সেখানে নেই।
অমিতের টুইট করা ছবিটি জুম্ করে হাওড়া পুলিশ কমিশনারের ‘Received’ স্ট্যাম্প চোখে পড়ছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পত্রে।

রামনবমী ঘিরে একাধিক চিঠি:
জানা গিয়েছে মার্চের ১ ও ৩রা মার্চে ইন্দ্র দেও দুবে, হাওড়ার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফ থেকে রামনবমী শোভাযাত্রার প্রধান আহ্বায়ক, দুটি চিঠি লেখেন। একটি ডিসিপি স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও একটি হাওড়া পুলিশ কমিশনারকে এবং ৩০শে মার্চের বিকেল ৪টে থেকে ৮টার মধ্যে রামনবমীর শোভাযাত্রার অনুমতি চান।
চিঠি অনুসারে এই শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল বি ই কলেজের ১নম্বর গেট থেকে রামকৃষ্ণ ঘাট পর্যন্ত। চিঠিতে জানানো হয় ৩০০জনের কমবেশি লোকের উপস্থিতি ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান ব্যবহৃত হবে।


জানিয়ে রাখি এই চিঠিতে জিজ্ঞেস করা হয়েছে এই শোভাযাত্রায় কোনো ধারালো তলোয়ার বা অস্ত্রের ব্যবহার হবে কিনা। এর উত্তরে ইন্দ্র দুবে জানিয়েছেন “করা হবে”।
২১শে মার্চ ভিএইচপি ও অঞ্জনী পুত্র সেনাদের উদ্দেশ্যে হাওড়া পুলিশের সহকারী কমিশনাররের তরফ থেকে রামনবমীর মিছিলকে নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
হাওড়ার ডেপুটি পালিশ কমিশনারের কার্যালয়ে পুলিশ কমিশনারের উপস্থিতিতে এই দুই সংস্থার কর্তৃপক্ষদের ডাকা হয় একটি আলোচনার জন্য। পুলিশের চিঠিতে বলা হয়েছে গত বছর রামনবমী নির্ধারিত সময় না মেনে চলার জন্য শোভাযাত্রায় গুরুতর ভাবে আইন ভঙ্গ হয়।
তাই এই বছর পুলিশের তরফ থেকে ৪টি গাইডলাইনের উল্লেখ করা হয়ছিলো যার মধ্যে ছিল -শোভাযাত্রা ২.৩০ থেকে ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
শোভাযাত্রায় কোনো রকম ধারালো অস্ত্র বা বাইকের মিছিল করা যাবে না। আয়োজক সংস্থাদের নিজেদের কর্মী ও অনুগামীদের পরিচয় জমা করতে হবে এবং শোভাযাত্রার ভিড় তাদেরকেই সামলাতে হবে।
মিছিলে কোনো রকম উচ্চস্বরে গান বাজানো বা ডিজে এবং কোনো প্রকার উস্কানিমূলক, বিদ্বেষ মূলক স্লোগান দেওয়া যাবে না।


২৮শে মার্চ র্যালির আয়োজকদর নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন সমাবেশে কতজন উপস্থিত থাকবে, র্যালি শুরুর ও শেষের রাস্তা এবং গত বছরের অনুমতি প্রদানের চিঠি সমেত সমস্ত তথ্য জমা করে। ২৯শে মার্চ ইন্দ্র দেও দুবে এর উত্তর দেন।
হাওড়া পুলিশের নির্দেশ না মেনে এই চিঠিতে লেখা হয় সমাবেশ শুরু হবে বিকেল ৩টে থেকে এবং চলবে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত। ইন্দ্র দুবে কত জনের উপস্থিতি হবে সেই বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি, উল্লেখ করা ছিল ২০০ থেকে দুই হাজার।
ভিএইচপি পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের রামনবমী শোভাযাত্রার অনুমতিপত্র, শোভাযাত্রার পথ ও ২০২২ সালের অনুমতি পত্র পাঠান।

রামনবমী শোভাযাত্রার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি; হাওড়া পুলিশ
নিউজচেকার হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠীর সাথে যোগাযোগ করে এই শোভাযাত্রাকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কিনা তা জানতে চায়। প্রবীণ ত্রিপাঠি জানিয়েছন ৩০শে মার্চের কোনো শোভাযাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়নি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও অঞ্জনী পুত্র সেনাদের।
এছাড়াও আমরা জানতে পারি এই দুই আয়োজক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে র্যালির যাবতীয় তথ্য ও যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছিল। কোনো পক্ষই সমাবেশ কেন্দ্রিক তথ্য দিতে অসমর্থ হয়। তাই তাদের অনুমতি এখনো আটকে রয়েছে।
দুবে জানিয়েছেন এই শোভাযাত্রার জন্য স্থানীয় থানা থেকে অনুমতি পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সবুজ বাতি দেখানো হয়নি।
যদিও নিউজচেকার স্বতন্ত্র ভাবে কোনো অনুসন্ধান করেনি রাজ্য সরকারের দাবি অনুসারে যে এই সমাবেশে উপস্থিত কর্মী সমর্থকরা সেইদিন পুলিশের নিয়ম ভঙ্গ করেছিল কিনা অথবা শোভাযাত্রার রুট থেকে বিচ্যুত হয়ে কোনো অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল কিনা।
সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান checkthis@newschecker.in অথবা whatsapp করুন- 9999499044 এই নম্বরে। এছাড়াও আমাদের সাথে Contact Us -র মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন ও ফর্ম ভরতে পারেন।