Authors
Claim
ক্যান্সার আদৌ কোনও রোগ নয়
ডাঃ বিকাশ গুপ্তা বলছেন, কেউই ক্যান্সারে মারা যাবে না, যদি তিনি নিম্নলিখিত কয়েকটি সহজ পদক্ষেপ করেন –
১. চিনি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তাহলে ক্যান্সারের জীবানু এমনিতেই মারা যাবে।
২. গরম জল দিয়ে তৈরি লেবুর সরবত ১-৩ মাস নিয়মিত পান করলে ক্যান্সার নিরাময়/প্রতিরোধ সম্ভব হয়। এটি কেমোথেরাপির চেয়ে ১০০০ গুণ ভাল। ডাঃ গুপ্তা আরও বলছেন, অজ্ঞতা কোনও অজুহাত হতে পারে না। ক্যান্সার প্রতিরোধের সহজ পদক্ষেপগুলো সবাইকে জানতেই হবে। ডাঃ গুপ্তা নিজে এই কথা গত ৫ বছর যাবৎ প্রচার করে চলেছেন।
দ্য ইউনিাভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণায় এই কথা প্রমাণ করেছেন।
Fact
চিনিমুক্ত ডায়েট, গরম লেবুজল পান করে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবিকে সমর্থন করার মতো কোনও গবেষণাই আমাদের বিশদ অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। সুতরাং পোস্টে যে দাবি করা হয়েছে তা মিথ্যা।
কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার অফ নেভাডা, যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্কোলজিস্ট ও হেমাটোলজিস্ট ডাঃ বিকাশ গুপ্তার পরামৰ্শ বলে দাবি করে একটি লিফলেট সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। ওই লিফলেটে ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের জন্য দুটি ঘরোয়া উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, চিনি খাওয়া বন্ধ করলে ও গরম জল দিয়ে লেবুর সরবত পান করলে ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি প্রতিরোধও করা যায়। সেই সঙ্গে পোস্টে এমনও দাবি করা হয়েছে, এই পদ্ধতি কেমোথেরাপির তুলনায় হাজার গুণ ভাল।
পোস্টটি এখানে ক্লিক করে দেখতে পাবেন।
এই একই দাবিতে অন্যান্য ভাষাতেও বহু পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। সেগুলি এখানে, এখানে ও এখানে ক্লিক করে দেখতে পারবেন।
Fact Check / Verification
সৰ্বপ্ৰথমে আমরা ১৩ কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার অফ নেভাডা, যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্কোলজিস্ট ও হেমাটোলজিস্ট ডাঃ বিকাশ গুপ্তা কে- তা জানতে অনুসন্ধান আরম্ভ করলাম। কিন্তু ওই নামের কোনও চিকিৎসকের সন্ধানই ১৩ কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার অফ নেভাডায় পাওয়া যায়নি।
এর পরে আমরা প্রথম দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলাম।
প্ৰথম দাবি – চিনি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তাহলে ক্যান্সার জীবানু এমনিতেই মারা যাবে।
মেয়ো ক্লিনিক দ্বারা সংকলিত List of Cancer Myths অনুযায়ী, খাদ্য তালিকায় চিনি এবং ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। যদিও ক্যান্সার কোষ-সহ সমস্ত কোষ শক্তির জন্য রক্তে শর্করার উপরে নির্ভর করে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে অধিক চিনি ক্যান্সারের কোষগুলিকে দ্রুত বৃদ্ধি করে এবং চিনির অভাব ক্যান্সার কোষের বিকাশকে ধীর করে দেয়।
ওই স্বাস্থ্য গোষ্ঠীর মতে, সম্ভবত পিইটি স্ক্যান নামে পরিচিত ইমেজিং পরীক্ষাগুলি কী ভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝির ফলেই ওই ভুল ধারণা তৈরি হয়ে থাকতে পারে। ওই স্ক্যানগুলি কারও শরীরে টিস্যু এবং অঙ্গগুলি কী ভাবে কাজ করছে- তা দেখতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সেই সময় রোগীরা একটি ওষুধ গ্রহণ করে, যা “রেডিয়োঅ্যাক্টিভ ট্রেসার” নামে পরিচিত, যা সাধারণত গ্লুকোজের একটি রূপ।
যদিও, মেয়ো ক্লিনিক বেশি চিনি খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণের দিকেই ইঙ্গিত করে এবং এ ভাবে চিনি বেশি খাওয়া ওজন বৃদ্ধি, স্থূলত্ব এবং ডায়াবেটিসের মতো অন্যান্য সূচকগুলির সঙ্গেও যুক্ত- যা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়, তবে চিনি সম্পূর্ণরূপে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিলেই (এবং এই পোস্টে বলা চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে) “ক্যান্সারের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় না”- যেমনটি পোস্টে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় দাবি – গরম জলে লেবুর সরবত ১-৩ মাস নিয়মিত পান করলে ক্যান্সার নিরাময়/প্রতিরোধ সম্ভব হয়
UAMS Health ওয়েবসাইটের একটি নিবন্ধ অনুসারে, ক্যান্সার কোষগুলি সাধারণত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, সংখ্যাবৃদ্ধির হারও খুবই দ্রুত- যা প্রচুর শক্তি শুষে নেয়। এর অর্থ তাদের প্রচুর গ্লুকোজ প্রয়োজন। শুধু চিনিই নয়; ক্যান্সার কোষগুলির অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফ্যাটগুলির মতো প্রচুর অন্যান্য পুষ্টিরও প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যকর কোষগুলিরও গ্লুকোজ প্রয়োজন এবং “আমরা কোনও ভাবেই দেহকে নির্দেশ দিতে পারি না যে স্বাস্থ্যকর কোষগুলিকে তাদের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ দেওয়া হোক, কিন্তু তা যেন ক্যান্সার কোষগুলিতে না দেওয়া হয়।” এখানে আরও বলা হয়েছে, এর “কোন প্রমাণ নেই” যে চিনি-মুক্ত ডায়েট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, বা “যদি ক্যান্সার ধরাও পড়ে তাহলেও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।”
অন্য দিকে, পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে এক কাপ গরম জলে একটি আস্ত লেবু মিশিয়ে এবং এক থেকে তিন মাস ওই মিশ্রণটি পান করলে ক্যান্সার “অদৃশ্য” হয়ে যাবে এবং এই “নিরাময়” “কেমোথেরাপির চেয়ে ১,০০০ গুণ ভালো”।
সেন্টার বলে, “লেবু সব ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রমাণিত প্রতিকার নয়, এবং কেমোথেরাপির সঙ্গে লেবুর কার্যকারিতা তুলনা করবে- এমন কোনও গবেষণা কখনও করা হয়নি।”
“সাইট্রাস জুস এবং লেবুর নির্যাসগুলির ক্যান্সার প্রতিরোধী সম্ভাবনা” সম্পর্কিত পূর্ববর্তী সমস্ত গবেষণা নিয়ে ২০১৭ সালের সমীক্ষা এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে লেবু ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এই দাবিকে সমর্থন করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য ক্লিনিকাল স্টাডি থেকে পাওয়া যায়নি।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, “সাইট্রাস বা লেবুর রসের ক্যান্সার প্রতিরোধী প্রভাব তুলে ধরা প্রাক-ক্লিনিকাল গবেষণার প্রচুর প্রমাণ থাকলেও, এর টিউমার বিরোধী কার্যকারিতার বর্তমান সীমাবদ্ধতা হল যে ওই ক্লিনিকাল অধ্যয়নগুলির সংখ্যা খুবই কম এবং তাদের ফলাফলগুলি রোগীদের উপর স্ব-মূল্যায়ন করা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত।”
এই বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে, আপনি এখানে, এখানে এবং এখানে ক্লিক করতে পারেন।
ফেসবুকের ওই পোস্টে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন “মেরিল্যান্ড কলেজ অফ মেডিসিন” যা, ওই পোস্ট অনুযায়ী, এমন একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, গরম জলের সঙ্গে একটি সম্পূর্ণ লেবুর রস মিশিয়ে তিন মাস ধরে পান করলে ক্যান্সার অদৃশ্য হয়ে যাবে।
মেরিল্যান্ড কলেজ অফ মেডিসিন বলে কোনও কলেজই নেই, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয় (University of Maryland School of Medicine) রয়েছে। কিন্তু ওই স্কুল লেবু এবং ক্যান্সার সম্পর্কে এমন কোনও গবেষণা প্রকাশ করেনি। “মেরিল্যান্ড কলেজ অফ মেডিসিন” বর্তমানে বিদ্যমান নেই। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৮০০ শতকের প্রথম দিকে এই নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবে এটি ১৮১২ সালে নাম বদলে বর্তমান নামে নথিবদ্ধ হয়।
Conclusion
অতএব, আমাদের লাভ করা তথ্য অনুসারে ক্যান্সার রোগ সম্পৰ্কে লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার করা তথ্য ভুল। স্বাস্থ্য সম্পৰ্কীয় তথ্য সর্বদা চিকিৎসকের পরামৰ্শ বা গবেষণার ভিত্তিতেই বিশ্বাস করবেন বা ব্যবহার করবেন।
Result: False
Our Sources:
1. Mayo Clinic
2. UAMS Health
3. National Center for Health Research
4. National Library of Medicine
5. University of Maryland School of Medicine
সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান checkthis@newschecker.in অথবা whatsapp করুন- 9999499044 এই নম্বরে। আমাদের whatsapp চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এখানে ক্লিক করে।এছাড়াও আমাদের সাথে Contact Us -র মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন ও ফর্ম ভরতে পারেন।