২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে চীনের উহান প্রদেশে “নভেল করোনা ভাইরাসের” উৎপত্তি হয়েছে। ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞরা এর নামকরণ করেছেন COVID-19 নভেল করোনা ভাইরাস নামে। চীনের ডাক্তারা মনে করছেন উহানের এক সামুদ্রিক জীবের মাংসের বাজার থেকে এই মারণ ভাইরাসের জন্ম হয়েছে, আরও বলা হচ্ছে যে বাঁদুড়, সাপের মাংস থেকে এই করোনা ভাইরাস এসেছে। এই ভাইরাসের উৎপত্তি স্থল চীনেই ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এবং ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চীন ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও এর করাল প্রকোপ পড়েছে।
ইরান, জাকার্তা, ইতালি দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশগুলোতেও এর কালো ছায়া পড়েছে। চীনের পর করোনা সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছে দক্ষিণ কোরিয়াতে। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে দঃ কোরিয়াতে ৪০জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৬ হাজার সাধারণ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার কথা সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া ইতালিতে এই ভাইরাসের জন্য ৪০০০ জন এর কবলে পড়েছে ও ১০০ প্রাণ হারিয়েছেন ।
ভারতও এই মারণ রোগের হাত থেকে রেয়াত পায়নি।ভারতে ২৯টি ইতিবাচক কেস এসেছে করোনা ভাইরাসের। কেরালায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির খবর সর্বপ্রথম সামনে আসে। তাকে পর্যাপ্ত পরিমান শুশ্রুষা করে সুস্থ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমাদের এই বিশেষ প্ৰতিবেদনে আমরা COVID-19 নভেল করোনা ভাইরাসের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বিষয় গুলি নিয়ে আলোচনা করবো।
১. COVID-19 নভেল করোনা ভাইরাসের লক্ষণ গুলি কি ?
মারণ ব্যাধি COVID-19 নভেল করোনা ভাইরাসের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো সর্দি কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া। কিন্তু সাধারণ ঠান্ডা লাগার থেকে এই রোগ একটু আলাদা। প্রথম পর্বে করোনা আক্রান্তদের সর্দি কাশি হবে এবং নাকদিয়ে জল পড়বে, দ্বিতীয় ধাপে এর প্রকোপ বাড়বে। চোদ্দো দিনের মাথায় শ্বাসকষ্ট শুরু হবে এবং শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের কাজ বিকল হতে শুরু করবে। শেষ পর্ব হলো মৃত্যু।
২. ভারতে COVID-19 নভেল করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি কি ?
ভারত গত কিছু দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত অভিযোগ গুলির উপর আমল দিতে শুরু করেছে এবংএই সংক্রমণের হাত থেকে দূরে থাকার জন্য সমগ্র ভারতবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে। বর্তমান ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডঃ হর্ষবর্ধন প্রত্যেক ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন যে ভারত করোনা ভাইরাসের সাথে মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরী ,এই ভাইরাস নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এর সাথে তিনি আরও বলেছেন যে ১২টি দেশ চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং,জাপান,দঃ কোরিয়া, ভিয়েতনাম,মালেশিয়া, নেপাল,ইরান,ইতালি থেকে আসা প্রত্যেক যাত্রীদের ২১টি এয়ারপোর্ট, ১২টি বৃহৎ বন্দর ও ৬৫টি ছোট বন্দরে এবং সীমান্ত প্রদেশ বিশেষত নেপাল ও ভারতের সীমাতে এই পরীক্ষা বেশ জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ৫,৫৭৪৩১ জন যাত্রী ও ১২৪৩১ বন্দর অঞ্চলে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই যাত্রীদের উপর IDSP Network এর দ্বারা নজর রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের থেকে পাওয়া খবর অনুসারে ১৫ টি বিশেষ ল্যাবটরি খোলা হয়েছে এবং আরও ১৯টি ল্যাব তাড়াতাড়ি খোলার কথা চলছে। খুব বিশেষ প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বেরোতে মানা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
করোনা ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে ভারতের তরফ থেকে ট্রাভেল অ্যাডভাইসারি জারি করা হয়েছে,যা বর্তমানে চীন ও ইরানের সমস্ত ভিসা বাতিল করেছে। আধিকারিকদের বক্তব্য অনুসারে ভারতীয় বিমান পরিসেবার সাথে যুক্ত অন্যান্য দেশ গুলির সাথেও ভারতের এই ভ্রমণ মন্ত্রক প্রতিনিয়ত যোগাযোগ বজায় রাখছে এবং ইরান ও ইতালির সরকারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ওখানে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো ইতিমধ্যে ভারতীয় সরকারের তরফ থেকে করোনা হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে, যাতে মানুষজন কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সম্পর্কে কোনো অভিযোগ ও তথ্য জ্ঞাপন করতে পারেন। নম্বরটি হলো – 01123978046। আর এটি ২৪ ঘন্টা চালু থাকবে।
৩. কিভাবে এই করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে আপনি সুরক্ষা প্রদান করতে পারেন?
এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সহজকে চিহ্নিত করা সোজা ব্যাপার নয় তাই জন্য,
১. প্রত্যেক সময়ে সাবান দিয়ে নিজের হাত ভালো করে পরিষ্কার করুন।
২. বাড়ির বাইরে বেরলে মুখে মাস্ক লাগান।
৩. বাড়ির বা বাড়ির বাইরে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি থাকলে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন এবং তার ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
৪. ঘর, বিছানা, রান্নাঘর যতটা সম্ভব পরিষ্কার পরিছন্ন রাখুন।
৫. করোনা যে অঞ্চলে পাওয়া গেছে সেই স্থান থেকে দূরে থাকুন।
যদি আপনি কোনো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন তাহলে কাম্য এটাই যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো দরকার ছাড়া ঘর থেকে বাইরে যাবেন না, শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলুন অন্ততপক্ষ্যে চোদ্দদিন।
এখনও পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী মারণ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এই ভাইরাসকে দমন করার উপযুক্ত প্রতিষেধক বাজারে আনার জন্য বিশ্বের প্রতিটি দেশ প্রানপন চেষ্টায় জুটেছে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিদের শুধু এর লক্ষণ গুলিকে ঠেকানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে এই বছরের শেষে এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবে, আক্রান্তদের বাঁচানো যাবে এবং এই জীবাণুর জন্য তৈরী হওয়া মৃত্যু মিছিলও শেষ হবে।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত আরও তথ্য পাওয়ার জন্য এর দিকে চোখ রাখুন। এই ভাইরাসের ব্যাপারে আরো জানার জন্য বা এই ভাইরাস কেন্দ্রিক কোনো ভুয়ো খবর পেয়ে থাকলে সত্তর আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
Facebook: Newschecker@Facebook
Email: checkthis@newschecker.in
Twitter: Newschecker@Twitter
Whatsapp: 9999499044