Authors
কলকাতার আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতলে এক ডাক্তার পড়ুয়াকে খুনের অভিয়োগ। সেই নারকীয় কাণ্ডের প্রতিবাদে মুখর সমগ্র রাজ্য, দেশ তথা গোটা বিশ্ব। সেই ঘটনায় একজন গ্রেফতার হলেও, দোষী বা দোষীদের চরমতম শাস্তির দাবিতে রোজ রাস্তায় নামছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় আছড়ে পড়ছে প্রতিবাদী পোস্ট।
আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতলের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যে নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক ভুয়ো খবর। কখনও ‘অভয়া’র দেহ হাসপাতাল থেকে বের করার ভিডিয়ো বলে ছড়িয়েছে ভুয়ো ক্লিপ। আবার কখনও বিরাট কোহলি, অরিজিৎ সিং-এর মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম জড়িয়ে রটানো হয়েছে এডিটেড কিংবা পুরনো ভিডিয়ো। এই সমস্ত খবরেরই পর্দাফাঁস করেছে Newschecker, যা দেখা যাবে এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
এরই মধ্যে ‘অভয়া’র নাম ও ছবি ব্যবহার করে ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে খোলা হয়েছে একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্ট। এক ঝলক দেখলে বোঝার উপায় নেই, সেগুলো আসল নাকি নকল। কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলেই বিষয়টা জলের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ইনস্টাগ্রামে ‘অভয়া’র নাম ও ছবি ব্যবহার করে খোলা প্রথম এই অ্য়াকাউন্টটির ফলোয়ার্স সংখ্যা ন’হাজারের বেশি। অ্য়াকাউন্টের বায়ো অংশে ডিজিটাল ক্রিয়েটর ও ডাক্তার বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে এবং ‘অভয়া’র একাধিক ছবিও রয়েছে। আরজি কর কাণ্ডের পর থেকে সোশ্য়াল মিডিয়া যেভাবে নির্যাতিতার নাম, ছবি ও পরিচয় ছড়িয়ে পড়েছে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ইতিমধ্যে কড়া নির্দেশ দিয়েছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও ভাবেই ‘অভয়া’র পরিচয় প্রকাশ্য়ে আনা যাবে না। সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁর সমস্ত পরিচয় সরিয়ে ফেলতে হবে। তাঁর নাম ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে হ্যাসট্যাগ ছড়িয়েছে, তাও মুছে ফেলতে হবে। তবে এই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টির একটু নীচের দিকে স্ক্রল করলেই দেখা যাবে অ্যাকাউন্টর প্রথম পোস্ট রয়েছে ১৭ অগাস্ট এবং আরজি কর কাণ্ডের প্রথম খবর আমাদের সামনে আসে ৯ অগাস্ট। অর্থাৎ ‘অভয়া’র মৃত্য়ুর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পরে অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে।
আরও একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার্স সংখ্যা তিন হাজারের কিছু বেশি। সেই অ্য়াকাউন্টটির প্রথম পোস্ট ‘অভয়া’র মৃত্য়ুর পর অর্থাৎ ১৯ অগাস্ট।
আরও দুটো ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট আমাদের নজরে পড়েছে, যাদের ফলোয়ার্স সংখ্যা যথাক্রমে ৫৯৪ এবং ৪৮২। অ্যাকাউন্টগুলোতে ‘অভয়া’র ব্যক্তিগত অনেক ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকী নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে চারদিকে যে মিছিল হচ্ছে সেই সমস্ত ছবিও সেখানে রয়েছে। কিন্তু প্রতিটা অ্যাকাউন্টেরই প্রথম পোস্ট ৯ অগাস্ট অর্থাৎ আরজি কর কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর করা হয়েছে।
আরও দুটো ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে রয়েছে মা-বাবা এবং পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ‘অভয়া’র বহু ছবি। সেই ছবিগুলোর কমেন্ট অংশে বহু মানুষ লিখেছেন, “I will miss u”। কেউ লিখেছেন তাঁদেরও ‘অভয়া’র কথা মনে পড়বে। এক পলক দেখলে মনে হবে, সেটাই হয়ত আসল অ্যাকাউন্ট। কিন্তু সেগুলোও ভুয়ো। কারণ, সেই অ্যাকাউন্টগুলোও অভয়ার মৃত্য়ুর পর থেকে অ্য়াক্টিভ হয়েছে। অ্যাকাউন্ট দুটো দেখুন এখানে, এখানে।
কেবলমাত্র ইনস্টাগ্রাম নয়, ফেসবুকেও জালিয়াতির জাল ছড়িয়েছে। ‘অভয়া’র নাম ও ছবি ব্যবহার করে সেখানেও ফেক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। অ্যাকাউন্টটির মাত্র ১৬ জন ফ্রেন্ডস এবং প্রথম করা পোস্ট ২১ অগাস্ট।
যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখের, আতঙ্কের এবং লজ্জারও বটে। কিন্তু তার থেকে অনেক গুণ বেশি ত্রাসের হল, মৃত্য়ুকে নিয়ে ভুয়ো খবরের নোংরা জাল বোনা। কেবল চোখে দেখতে পাওয়া যায় এমন বিপদ থেকেই সজাগ থাকলে হবে না। পর্দার আড়ালে থাকা ফেক নিউজের ষড়যন্ত্র থেকেও বাঁচতে হবে। সতর্ক থাকুন, ফেক নিউজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।