সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ২৯ সেকেন্ডের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে হুগলির বিখ্যাত তারকেশ্বর মন্দিরের (Tarkeshwar Temple) কাছে গঙ্গার ঘাটে দর্শনার্থীদের ধর্মীয় স্নানের জন্য কর বা চাঁদা দিতে হচ্ছে। ওই ভিডিয়োতে একটি টিকিট দেখিয়ে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “এই হল দিদির উন্নয়ন। আমরা তারকেশ্বরে জল ঢালতে যাবো। গঙ্গায় স্নান করেছি। দশ টাকা করে টিকিট লাগছে। জয় বাংলা! গঙ্গা স্নান করতে দশ টাকা করে টিকিট লাগছে। যেখানে জলের কোনও অভাব নেই। লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী আসছে। সেখানে দশ টাকা করে টিকিট লাগছে। টিকিট কেটে ঢুকতে হচ্ছে ঘাটে।”
ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “মুঘলের পর.. মমতা বানোর সরকার #জাজিয়া কর আরোপ করল।। গঙ্গা স্নানের উপর কর আরোপ..তারকেশ্বর শিব মন্দির দর্শনের পূর্বে গঙ্গা স্নানের বিবৃতি।। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার গঙ্গা স্নানে ভক্ত প্রতি ১০ টাকা নিচ্ছে..এই কর কোন ১~২ থেকে নয়, গঙ্গা স্নানরত লক্ষ লক্ষ ভক্তদের কাছ থেকে আদায় হচ্ছে।।”

কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও তার এক্স হ্যান্ডেলে ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে রাজ্য সরকার বৈদ্যবাটির নিমাই তীর্থ ঘাটে ‘কর’ আদায় করছে এবং সরকারকে ‘হিন্দু বিরোধী’ বলে সমালোচনা করেছেন।
Fact Check/ Verification
তদন্তের শুরুতেই আমরা ভাইরাল ভিডিয়োটি সাবধানে পরীক্ষা করতে শুরু করি। আমরা একটি ফ্রেম খুঁজে পাই যেখানে সরকারের দ্বারা জারি করা ‘কর’ নির্দেশকারী টিকিটটি ছিল এবং সেই ফ্রেমটি উল্টে দেখার চেষ্টী করি। সেই টিকিটে লেখা ছিল, “উন্নয়ন পরিষেবা ১০ টাকা।” তবে, সেটি কোনও সরকারি সংস্থা কর্তৃক জারি করা হয়েছে, এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি, কারণ তাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা স্থানীয় পুরসভার নাম বা লোগো ছিল না।

তারকেশ্বরের ঘাটে (Tarkeshwar Temple) আগত তীর্থযাত্রীদের উপর কর আদায়ের অভিযোগ সংক্রান্ত কোনও সংবাদ প্রতিবেদনও আমাদের নজরে পড়েনি।
ভাইরাল ভিডিয়োটির একটি কি-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, ৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখ, এক্স-হ্যান্ডেলে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের করা একটি পোস্ট আমাদের নজরে পড়ে। যেখানে দাবি করা হয়েছে যে সুকান্ত মজুমদারের পোস্টটি মিথ্যা। সেই এক্স পোস্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার বৈদ্যবাটি নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে পবিত্র গঙ্গা জল গ্রহণের জন্য তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে কোনও ‘ফি’ আদায় করছে না।
Newschecker-এর তরফে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় সাংবাদিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তিনি আমাদের জানান, “ঘাট কর্তৃপক্ষ বা রাজ্য সরকার, নিমাই তীর্থ ঘাটে কোনও টাকা আদায় করছে না। কিছু বেসরকারি ঘাট রয়েছে, যেগুলি বেশিরভাগই স্থানীয় ক্লাবগুলোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তারা টিকিটের বিনিময়ে ওই টাকা আদায় করছে। এই বেসরকারি ঘাটগুলি আগে স্থানীয় জমিদারদের মালিকানাধীন ছিল। এখন স্থানীয় ক্লাবগুলি সেই বেসরকারি ঘাটগুলি ব্যবহারের জন্য লোকেদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে।”
ভাইরাল দাবি সম্পর্কে আরও জানতে, নিউজচেকারের তরফে শেওড়াফুলি পুরসভার চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার বা পুরসভা নিমাই তীর্থ ঘাটে আসা ভক্তদের কাছ থেকে কোনও কর আদায় করে না। এটি সম্পূর্ণ অপপ্রচার। এখানে শুভতলা ঘাট, জগন্নাথ ঘাট এবং পোদ্দার ঘাটের মতো কিছু ব্যক্তিগত ঘাট রয়েছে, যা স্থানীয় ক্লাবগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে। তারা এই ঘাটগুলির উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে কিছু অনুদান নিয়ে থাকে। এটা নতুন নয়, বহু বছর ধরেই হচ্ছে।”
আমরা শ্রীরামপুর জেলা বিজেপির সভাপতি সুমন ঘোষের সঙ্গেও কথা বলি। তিনি বলেন, “বহু বছর ধরেই এটা চলে আসছে। যারা তারকেশ্বরে যান, তারা সাধারণত বৈদ্যবাটি এবং শেওড়াফুলির ঘাট থেকে জল নেন। এই জল কোনও একটি ঘাট থেকে নেওয়া হয় না। হাতিশালা ঘাট, শুরিঘাট, ইটভাটা ঘাট, নিমাইতীর্থ ঘাট, পোদ্দার ঘাট, বালি ঘাট, ত্রিশক্তি ঘাট, চতুগঞ্জ ঘাট, এই রকম নয়-দশটি ঘাট থেকে জল নেওয়া হয়। নিমাইতীর্থ ঘাটই একমাত্র সরকার দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। সেই ঘাট থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয় না। অন্যান্য ঘাট থেকে চাঁদা তোলা হয়। পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর, সকলেই এতে জড়িত…।”
Conclusion
এখান থেকে স্পষ্ট যে, শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরের (Tarkeshwar Temple) গঙ্গা ঘাটে আসা হিন্দু তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে রাজ্য সরকার কর আদায় করছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা বিভ্রান্তিকর।
Sources
X post by West Bengal Police dated August 4, 2025
Telephonic conversation with Pintu Mahato, Chairman of Sheoraphuli Municipality
Telephonic conversation with Suman Ghosh, Serampore District BJP President
Telephonic conversation with a local Journalist