Authors
With a penchant for reading, writing and asking questions, Paromita joined the fight to combat and spread awareness about fake news. Fact-checking is about research and asking questions, and that is what she loves to do.
দাবি: করোনা মোকাবিলায় ভারতের প্রতিটি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতখানি স্বাস্থ্যকর তার প্রমান প্রতি পদে পদে পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা ঠিক নয়, কোথাও পর্যাপ্ত পরিমান ডাক্তারের অভাব, আবার কোথাও ভিন রাজ্যের নার্সরা নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাচ্ছে। করোনা যেন শুধু মাত্র মানবদেহ নয়, মানবিকতাকেও যেন আক্রান্ত করেছে। সম্প্রতি ফেসবুকে মমতা ব্যানার্জীর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে- তিন বছর ধরে নার্সিং ট্রেনিং নিতে গেলে, হাসপাতালগুলো কি করে চলবে। যদি মাননীয়ার উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে তিনি মাত্র এক সপ্তাহেই নার্স তৈরী করতে পারবেন।
https://www.facebook.com/bjpsupporterWB/videos/1487199051471921/?v=1487199051471921
https://www.facebook.com/surojit.chanda.92/videos/1672934899573384/
https://www.facebook.com/kamaldey.joypur/videos/281226416251075/
বিশ্লেষণ:পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যের পরিকাঠামো নিয়ে প্রতিদিন বিরোধী শিবির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যাচ্ছে। সত্যিই পরিকাঠামো যে ভঙ্গুর এই করোনার তান্ডবলীলা তা প্রমান করেছে। তৃণমূল সরকার করোনা আক্রান্তদের প্রকৃত তথ্য লুকোচ্ছে বলে বিরোধী দল বার বার সরকারকে দায়ী করছে। শুধু বিরোধী শিবির নয়, কেন্দ্র সরকারের থেকেও বারংবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে বাংলায় আসলে কত জন করোনা আক্রান্ত ও কতজন করোনায় মৃত। এছাড়াও বাংলার স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মীদের তরফ থেকে সরকার পক্ষের কাছে করোনার সাথে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় PPE চেয়ে বার বার আবেদন করা হচ্ছে।কোথাও কোথাও স্বাস্থ্যকর্মীরা রীতিমতো সরকার পক্ষের এহেন উদাসীনতার প্রতি নিজের মনের ক্ষোভ -রাগ উগরে দিচ্ছে। যদিও সরকার সেই অনুরোধের উপর কত আমল দিয়েছে তার কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি।
শুধু মনের ক্ষোভ প্রকাশ নয়,ডাক্তার,নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা যে প্রকৃতই দুরাবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তার প্রমান মেলে যখন করোনা ডিউটিতে কর্মরত নার্সদের নিজেদের পাড়ায় হেনস্থা হতে হয়।
- আনন্দবাজার পত্রিকার তরফ থেকে আমরা জানতে পারি কলকাতা ও মেদিনীপুরে নার্সদের সাথে পাড়া প্রতিবেশীদের অমানবিক ব্যবহারের কথা। ব্যারাকপুরে একই হাসপাতালে কর্মরত এক স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সকে পাড়ার লোকেদের দ্বারা হেনস্থা হতে হয়, কারণ তারা করোনা ডিউটিতে ছিলেন। এমনকি পুলিশের তরফ থেকে তার কোনো মন্ত্যব না শুনেই নার্সটির বাড়ির দরজায় ‘ হোম কোয়ারেন্টাইন ‘ লেখা কাগজ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।
- কলকাতার যাদবপুরের মতো জায়গাতেও স্বপরিবারে নিয়ে থাকা এক নার্সকে প্রতিবেশীদের থেকে কটু কথা শুনতে হয় যেহেতু উনি হাসপাতালে কর্মরতা।
- মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামেও তেমনি এক সেবিকাকে বাড়িতে ঢোকার মুখে বাড়িওয়ালা ও পাড়া প্রতিবেশীদের থেকে মানসিক হেনস্থা হতে হয়।
এছাড়াও কিছুদিন ধরে সারা বাংলা জুড়ে ভিনরাজ্যের নার্সদের পরিষেবা ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টিও বাংলার প্রতিটি মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ৫০০ জন ভিনরাজ্যের নার্সদের তাদের নিজেদের রাজ্যে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মনিপুরের থেকে ৩০০ নার্স ইস্তফা দিয়েছেন কাজের থেকে।
এই খবরগুলো যেমন চাঞ্চল্যকর তেমনি ভয়ানক। বাংলার এই দুর্যোগের সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে এই ধরণের অমানবিক ব্যবহার যথেষ্ট ভীতির সূচনা করে। এর মধ্যে ‘সাথে দিনের মধ্যে নার্সিং ট্রেনিং’ দেওয়ার মতো ভিডিও পরিস্থিতিকে আরো সঙ্গিন করে তুলেছে।
ভাইরাল এই ভিডিওটি যথেষ্ট সন্দেহজনক, কারণ করোনার লকডাউনের ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে যতবার জনসমক্ষে আসতে দেখা গেছে, তাকে মুখে মাস্ক পড়ে সামাজিক দূরত্বে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু এই ভিডিওটিতে তিনি তার সচিবদের সাথে এক মঞ্চে বসে সভা করতে দেখা যাচ্ছে তাও আবার বিনা মাস্কে।
দ্বিতীয়ত, যে মঞ্চটি দেখা যাচ্ছে তার দেওয়ালে একটি ব্যাকড্রপ টাঙানো রয়েছে। যেখানে লেখা ‘Administrative Review Meeting’ এর নিচে লেখা মালদা অঞ্চল। অর্থাৎ এই ভিডিওটি রেকর্ডিং হয়েছে যখন মালদা জেলাতে প্রশাসনিক বৈঠক চলছিল। কিন্তু মুশকিল হয় এটা জানার ক্ষেত্রে যে এই বৈঠকটি কবে আয়োজিত হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতির সময়কালে না তার আগে।
আমরা জানতে পারি এই ভিডিওটি এর আগেও কয়েকবার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার হয়েছে।
https://www.facebook.com/Pseudobongs/videos/533115500891373/?v=533115500891373
এই সূত্র ধরে আমরা ইউটুবে এই ভিডিওটি আসলে কবেকার জানার জন্য খোঁজ শুরু করি। কিছু কীওয়ার্ড দিয়ে খোঁজ করার পর আমরা আসল ভিডিওটি পাই। মালদা জেলায় ২০১৭ সালের প্রশাসনিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। মালদায় কেন পুরুষ নার্সের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছেনা কেন তা নিয়ে তিনি জানতে চান। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয় সেখানেও ‘ মেল নার্স’ কথাটি আমরা দেখতে পাই। কেন পুরুষ নার্সদের সংখ্যা বেশি নয় মালদার স্বাস্থ্য পরিষেবায়, কতদিন লাগবে পুরুষ নার্সেরদের নিয়োগ করতে, মমতা ব্যানার্জী তা জানতে চান। তখনি তিনি বলেন যে- নার্সদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য তিন বছর সময় অতিরিক্ত সময়, ট্রেনিংয়ের জন্য হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলি কি তত দিন খালি পরে থাকবে। E TV বাংলা অর্থাৎ এখন যেটি News ১৮ বাংলা চ্যানেল, তাদের ইউটুবে চ্যানেল থেকে আমরা এর প্রকৃত ভিডিওটি পাই।
অর্থাৎ করোনার এই আবহে যখন স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে, নার্সরা ইস্তফা দিয়ে তাদের নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাচ্ছে তখন এই ধরণের ভিডিও একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রীর সাধারণ জ্ঞানের প্রতি প্রশ্ন তোলে তেমনি রাজ্যের মেডিকেল সিস্টেমের অযোগ্যতার পরিচয় দেয়।
ইউটুবে থেকে এই ভাইরাল ভিডিওর বিশ্লেষণাত্মক ভিডিও পাই যেখানে মাননীয়ার এহেন মন্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে এটা না জেনে যে এই ভিডিওটি আসলে কোন সালের।
আমরা রাজ্যে পুরুষ নার্সদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ করতে শুরু করি। ২০১৩ ও ২০১৪ সালের আন্দন্দবাজার পত্রিকার ও এইসময়ের তরফ থেকে দুটি রিপোর্ট পাই যেখানে পশ্চিমবাংলার সরকার অনেক আগে থেকেই জেলা ও কলকাতায় পুরুষ নার্সদের নিযুক্তি করণের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছিল। ২০১৬ সালের একটি রিপোর্ট পাই যেখানে রামপুরহাটের জেলা স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজন মতো নার্স নিযুক্ত না করেই হাসপাতল শুরু করে দেওয়া হয়েছিল।
এই বিষয় নিয়ে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের বিধায়ক অভিনেতা দেবের একটি সাক্ষাৎকার পাই যেখানে তিনি এই চরম দুর্দিনে সংকটের মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও ব্যবস্থা দিতে প্রস্তুত হয়েছেন। Asianet News বাংলার তরফ থেকে আমরা এই রিপোর্টটি পাই।
অর্থাৎ বাংলায় নার্সদের ঘাটতি বা নব নিযুক্তিকরণ কোনো নতুন বিষয় নয়।
এবার জানা যাক রাজ্য যখন করোনার ফলে চরম সংকটের সম্মুখীন তখন ৫০০ জন নার্সদের তাদের জীবিকা ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। মমতা ব্যানার্জীর ফেসবুক পেজ থেকে আমরা একটি সাংবাদিক বৈঠকের ভিডিও পাই যেখানে তিনি অভিজ্ঞ ও কর্মরত নার্সদের তাদের নিজের রাজ্যে চলে যাওয়ার ফলে যে শূন্যতা তৈরী হয়েছে তাকে ভরাট করার জন্য লোকাল ছেলে মেয়েদের ৭ দিনের জন্য ট্রেনিং দেয়া হবে যেখানে তাদের সেখান হবে কি ভাবে রোগীর তাপমাত্রা মাপা হয়, প্রেসক্রিপশন দেখে সময় মেপে রোগীকে ওষুধ দেওয়া হবে ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি নার্সিং ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন এমন মানুষ যারা অবসর নিয়েছেন, তারা যদি পুনরায় যোগদান করতে চান, সরকার তাদের গ্রহণ করবে। কারণ এনারা অভিজ্ঞ ও জানেন কি ভাবে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে রোগীর ঠিক মতো যত্ন করা হয়।
https://www.facebook.com/MamataBanerjeeOfficial/videos/617517338846810/
অর্থাৎ নার্স নিয়োগ, নার্সেরদের ট্রেনিং দেওয়ার যে খবর ও ভিডিও আমরা পাই সেটি আসলে ২০১৭ সালের। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির সাথে এর কোনো সম্পর্কে নেই।
ব্যবহৃত টুলস:
- Google keyword search
- Youtube search
- Media reports
ফলাফল:ভুল দাবি
(সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান checkthis@newschecker.in অথবা whatsapp করুন- 9999499044 এই নম্বরে। )
Authors
With a penchant for reading, writing and asking questions, Paromita joined the fight to combat and spread awareness about fake news. Fact-checking is about research and asking questions, and that is what she loves to do.