শুক্রবার, নভেম্বর 22, 2024
শুক্রবার, নভেম্বর 22, 2024

HomeFact Checkকেরলে দুবছর আগে যে আদিবাসীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তার ছবি কে...

কেরলে দুবছর আগে যে আদিবাসীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তার ছবি কে ভাইরাল করা হলো গর্ভবতী হাতির খুনির নাম দিয়ে

Authors

With a penchant for reading, writing and asking questions, Paromita joined the fight to combat and spread awareness about fake news. Fact-checking is about research and asking questions, and that is what she loves to do.

দাবি: আজ সকালে ফেসবুক থেকে একটি পোস্ট আমাদের সামনে আসে যেখানে লেখা আছে – এই সেই ব্যক্তি যে কেরলের গর্ভবতী হাতিকে হত্যা করেছে।  একটি পেজ ‘ঘর সাজানোর আইডিয়া’ তে মোহাম্মদ সাকিবুল হাসান এই ছবিটি ওই পেজটিতে উপলোড করে।  ফোটোটির সাথে তিনি লিখেছেন ‘ এই সেই জালিমের বাচ্চা কেরালায় গর্ভবতী হাতি কে আনারস এর মধ্যে বোম দিয়ে হত্যা করে, কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত – – এখানে পোস্টটির আর্কাইভ দেওয়া হলো।    

বিশ্লেষণ: কেরলের নাম  কানে আসলে সবার আগে যে ছবি আমাদের  সামনে ফুটে ওঠে তা হলো সবুজে মোরা একটি রাজ্য।  যেদিকে দুচোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।   অন্য আরেকটি যে বিশেষত্ব তা হলো কেরলের বন্য প্রাণী, যার মধ্যে সব থেকে উল্লেখ যোগ্য হলো হাতি।  কেরলে ঘুরতে গিয়ে যদি কেউ হাতির পিঠে না চড়ে তাহলে যেন ঘুরতে যাওয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়।  সবুজে মোরা পাহাড়, গাছপালা, জীবজন্তুর উপস্থিতি এখানে এতো পাওয়া যায়, তার জন্যই হয়তো কেরলকে  ভগবানের নিজের দেশ নামেও ডাকা হয়।  

কিন্তু ভগবানের এই দেশে গত সপ্তাহে একটি বছর পনেরোর সন্তানসম্ভবা হাতির মৃত্যু কে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে কি করে এই ঘটনা ঘটে?   ২৭শে মে কেরলে অবস্থিত পালাক্কাড জেলার সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের  এই হাতিটি জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসে খাবারের সন্ধানে। দুমাসের ভ্রূণ ছিল তখন তার শরীরের ভেতর।  হাতিটি সামনে ফসলের ক্ষেতে ফল পরে থাকতে দেখে  সেটি মুখে পুড়ে নিয়ে খেতে শুরু করলে ওই ফলের ভেতরে থাকা বাজি ও পটকা তার মুখের ভেতর ফেটে যায়।সাধারণত কেরলের গ্রামবাসীরা বুনো শুয়োর মারা জন্য ফল জাতীয় খাবারের মধ্যে বাজি, পটকা ভোরে রেখে দেয়।  মনে করা হচ্ছে সন্তানসম্ভবা হাতিটি হয়তো সেই খাবার খায় ও তার মৃত্যু হয়।  তবে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে কি ভাবে ওই হাতিটির মৃত্যু হয়।  

হাতিটি রক্তাক্ত মুখ , শুঁড়, গলা আর  ওই অবস্থায় সে চলে আসে ভেলিয়ার নদীর কাছে, যা থিরুভিজমকুন্নু নামক অঞ্চল থেকে ৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত।  ঠায় জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে যাতে ক্ষত কিছুটা হলেও সারে, নতুন যে প্রাণ শরীরের ভেতর বেড়ে উঠছে তাকেও বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাতিটিকে বাঁচানো যায়নি। সন্তানসম্ভবা হাতিটি জলের মধ্যে দাঁড়িয়েই মৃত্যুর দ্বারে পৌঁছে যায়। TOI সংবাদ মাধ্যম থেকে এই ঘটনার বর্ণনা পাই।  

একটি মালায়ালম সংবাদ মাধ্যমের Matrubhumi.com দাবি অনুসারে হাতিটির চোয়াল ফেটে যাওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে । 

ঘটনাটি সবার প্রথম মোহন কৃষ্ণণের  ৩০শে মে ফেসবুকে এই ঘটনার কথা লেখেন মালায়ালম ভাষায়।  মানুষকে বিশ্বাস করে হাতিটি আনারস বা ফল খায়।  ফলটির মধ্যে পোড়া ছিল বাজি, যা তার মুখে যাওয়ার পর ফেটে বিস্ফোরণ ঘটে।  সেই যন্ত্রণানিয়ে সে দৌড়াতে শুরু করে কিন্তু কোনো বাড়িঘর, ফসল নষ্ট করেনি।  ভেলিয়ার নদীর কাছে পৌঁছে সেই নদীর মধ্যে তার শুঁড় ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ক্ষত ও যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।  কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।  

হাতিটিকে পাওয়ার পর বন দপ্তর চেষ্টা করে তাকে শুশ্রুষা করার, কিন্তু হাতিটি না জল থেকে উঠছিলো না কিছু মুখে দিচ্ছিলো।  অন্য কিছু হাতি এনে জলে ছেড়ে দেওয়া হয় যাতে সেও তাদের সাথে উঠে আসে, কিন্তু সে ওই জলের মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিল আর  ঐ খানেই তার মৃত্যু হয়।  পরে যখন তাকে জল থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয় জানা যায় যে সে দুমাসের অন্তঃসত্ত্বা  ছিল।

https://www.facebook.com/mohan.krishnan.1426/posts/2979525145456462

ঘটনাটি নিয়ে কেরল বন বিভাগের টুইটার পেজ থেকে একটি টুইট পাই যেখানে এই ঘটনার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে এই নিন্দনীয় হত্যার বিচার চাওয়া হয়েছে।  

 মর্মান্তিক এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হয়ে ওঠে। ভারতের যে রাজ্যে সব থেকে বেশি শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেশি সেখানে এমন অশিক্ষিত, অবিবেচকের মতো ঘটনায়  অভিনয় জগৎ  থেকে শুরু করে ক্রিকেটের জগতের তারকারা এই ভয়ঙ্কর ঘটনার নিন্দা  করেছে।  খবর মারফত জানতে পারি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ান টুইট পাই  যেখানে তিনি বলেছে এটি খুব দুর্ভাগ্যজনক বিষয়, কেরল সরকার এই ঘটনা খতিয়ে তদন্ত করছে।   আরো বলেছেন  কি ভাবে হাতিটির  মৃত্যু হলো তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে এবং এর জন্য যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা  করা হবে। হাতিটির  মৃত্যু নিয়ে অকারণ জলঘোলা করা করা হচ্ছে, তবে খুব তারাতারই এই ঘটনার নিস্পত্তি হবে  বলে জানিয়েছেন। 

কিন্তু এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর জন্য যাকে  দায়ী করা হচ্ছে, সেই লোকটি ২০১৮ সালেই মারা যায়।  ফেসবুক থেকে পাওয়া এই ছবিটির যখন আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি তখন কিছু খবরের লিংক আমাদের সামনে খুলে যায়। 

 ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালের ফেব্রূয়ারি মাসে।  যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে তার নাম ছিল মধু।  মানসিক ভারসাম্যহীন ২৭ বছরের এই যুবক  পালাক্কাড জেলার আট্টাপ্পাডের আদিবাসী ছিল যাকে স্থানীয় কিছু লোক মিলে খাবার চুরি করার জন্য ধরে।  তাকে বেশ কয়েক ঘন্টা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় ও তার সাথে চলতে থাকে মার।  মুকালি জংশনের পুলিশের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হলেও, মার খাওয়া এই যুবকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তাতেই তার মৃত্যু হয়।  দুজন দোষীকে গ্রেপ্তার করা হয় এই ঘটনার জন্য এবং ওই দলে আরো যারা যারা ছিল তাদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। 

Indian Express, TOI, Decan Herald, Scroll.in প্ৰভৃতি সংবাদ মাধ্যমের থেকে আমরা এই ঘটনার বিবরণ পাই।  

আমাদের অনুসন্ধানের দ্বারা আমরা জানতে পারি কেরলের যে গর্ভবতী হাতিটির হত্যাকারী রূপে যার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়েছে, সেই ব্যক্তিটি ২০১৮ সালে খাবার চুরির অপরাধে মারা যায়। হাতি মৃত্যুর সাথে এই ব্যক্তির কোনো যোগাযোগ নেই। 

ব্যবহৃত টুলস:

  • Google reverse image search
  • Media report

ফলাফল: অপ্রাসঙ্গিক Misleading

(সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান checkthis@newschecker.in অথবা whatsapp করুন- 9999499044 এই নম্বরে। ) 

Authors

With a penchant for reading, writing and asking questions, Paromita joined the fight to combat and spread awareness about fake news. Fact-checking is about research and asking questions, and that is what she loves to do.

Paromita Das
With a penchant for reading, writing and asking questions, Paromita joined the fight to combat and spread awareness about fake news. Fact-checking is about research and asking questions, and that is what she loves to do.

Most Popular